Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ডিসেম্বর শেষে রেকর্ড ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ হয়েছে। এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। তবে আর্থিক সংকট থাকার কারণে ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ২৮ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দিয়েছে। ডেফারেল সুবিধা পেলেও এর মধ্যে ২৬টি ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি পূরণে ডেফারেল সুবিধা নেওয়া ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বিশেষ বিবেচনায় দুটি ব্যাংককে লভ্যাংশ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সুবিধা পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল। তবে এর মধ্যে দুটি ব্যাংক ঢাকা ও সীমান্ত ব্যাংককে লভ্যাংশ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ঋণের মানভেদে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। যেসব ব্যাংক তা রাখতে পারে না, তাদের ব্যাংকের মূলধন থেকে সেই ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। ফলে ব্যাংকের মূলধন কমে যায়। পাশাপাশি যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, তারা ঘাটতি রেখে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এ দুই সমস্যা সমাধানে এতদিন ডেফারেল নামক অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো মুনাফা দেখিয়ে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্তের আগে ১৬টি ব্যাংক সুবিধা নিয়ে লভ্যাংশ দিয়েছিল। তবে এবার ব্যাংক পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুবিধা নেওয়া ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার ক্ষেত্রে অনড় ছিল।
গত ২১ মে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২২ ধারা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬টি ব্যাংককে চিঠি দেয়। তাতে আর্থিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ দিতে নিষেধ করা হয়।
এসব ব্যাংককে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর মতো মুনাফা ব্যাংকগুলোর নেই। ফলে এসব ঘাটতি সমন্বয় না করে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে পারবে এসব ব্যাংক।
প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকগুলোকে এক মাসের মধ্যে নিজ নিজ বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত বাস্তবসম্মত ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ তাদের আর্থিক বিবরণী ও পুঁজিবাজারের তথ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
প্রভিশন রক্ষণাবেক্ষণ, লাভ-ক্ষতির হিসাব ও মূলধন পর্যাপ্ততা সম্পর্কিত তথ্যে ঘাটতির কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো বলেছে, দাখিলকৃত তথ্য ও নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর মধ্যে অসংগতি থাকলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক বছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এবার সেটি হয়নি। একই অবস্থা হয় তালিকাভুক্ত নয়- এমন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও।